কালীপুজো বা দীপাবলীর আগে ভূত চতুর্দশীতে আমরা ১৪ প্রতি জ্বালাই, আর রীতি অনুযায়ী ১৪ প্রকার শাক খেয়ে আসছি। তবে স্বার্থের বিভিন্ন গ্রন্থে এই চোদ্দো শাকের বিশেষ বর্ণনা আছে। এই রীতি স্বাস্থ্যসম্মতও। প্রাচীন স্মৃতির গ্রন্থ ‘নির্ণয়ামৃত’-র অভিমত অণুসরণ করে এই ১৪ প্রকার শাকের উল্লেখ করেছেন।
আজ এখন ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার,২৯ অক্টোবর: শাক খাওয়া আমাকে শরীরের পক্ষে খুবই জরুরী ও স্বাস্থ্যকর। দীপাবলীর আগের দিন যে ১৪ রকমের শাক খাওয়া যে কতটা উপকার তা অনেকেই জানেন না। এই নিয়মের আড়ালে উপকারিতা অফুরান।
কালীপুজো বা দীপাবলীর আগে ভূত চতুর্দশীতে আমরা ১৪ প্রতি জ্বালাই, আর রীতি অনুযায়ী ১৪ প্রকার শাক খেয়ে আসছি। তবে স্বার্থের বিভিন্ন গ্রন্থে এই চোদ্দো শাকের বিশেষ বর্ণনা আছে। এই রীতি স্বাস্থ্যসম্মতও। প্রাচীন স্মৃতির গ্রন্থ ‘নির্ণয়ামৃত’-র অভিমত অণুসরণ করে এই ১৪ প্রকার শাকের উল্লেখ করেছেন।
কোন শাক, কী গুণ?
ওল– ওলের কন্দ অর্শ, প্লীহা বৃদ্ধির রোগ ও রক্ত আমাশার চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
কেঁউ– কেঁউ পাতার রস ভাল হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, কৃমি, চুলকানি, ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়।
বেতো বা বেথুয়া– এই শাকে প্রচুর ভিটামিন–এ,
ভিটামিন–সি, লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তাল্পতা, অম্বল, কৃমি, মুখে ঘা, ত্বকের রোগ, বাত ও অর্শ প্রতিরোধে বেথুয়া শাক খুব উপকারী।
জয়ন্তী– বহুমূত্র, শ্বেতী, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।
শালিঞ্চ বা শিঞ্চে– এই শাককে সাঁচিশাকও বলে। চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য শালিঞ্চা শাক খুব উপকারী। ডায়েরিয়া, অজীর্ণ চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।
গুড়ুচি– ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায় ।
শেলুকা– কাঁচা গাছ ও বীজ মশলা হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। আর শাক হিসাবে ব্যবহৃত হয় পাতাসহ ডগা। সংস্কৃতে শুলফাকে বলে শতপুষ্প। ভেষজ। মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে শুলফা শাক খুব উপকারী। বাচ্চাদের গ্রাইপ ওয়াটারের একটা উপাদান এই শুলফা শাক থেকে আসে। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর, ইত্যদি রোগের নিরাময়ে শুলফা খুবই কার্যকর।
ঘেঁটু/ঘণ্টাকর্ণ– এর পাতাতে প্রচুর ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
শুষনি– বিজ্ঞানসম্মত নাম মার্সিলি কোয়াড্রিফোলিয়া বা মার্সিলি মিনুটা, শুষনি হল উদ্ভিদ। ভারতসহ দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, চিন, মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে শাক ও ভেষজ উদ্ভিদ হিসাবে শুষনি খুব পরিচিত। ভোজ্য অংশ পাতা, নিদ্রাহীনতায় যাঁরা ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শুষনি।
আপামর জনগণ একটু সচেতন হলেই এই উদ্ভিদকুলের সংরক্ষণ, সংবর্ধন ও ব্যবহার সহজেই করতে পারেন যা আপনাকে, পরিবারের সকলকে শুধু সুস্থ রাখবেই তা নয়, যার ফলে আর্থিকভাবেও আপনি লাভবান হতে পারেন।
