সহকর্মীদের সাক্ষ্যে দুর্নীতির ফাঁস, ফের ফাঁদে অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ

আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 2 জানুয়ারি: আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠা কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে। সিবিআই-এর দাবি, সহকর্মী আধিকারিকদের সাক্ষ্য ও উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে সন্দীপের অপরাধের চিত্র স্পষ্ট। তদন্তে জানা গেছে, জাল নথি বানিয়ে সন্দীপের ঘনিষ্ঠ দুই ব্যবসায়ী সুমন হাজরা ও বিপ্লব সিংহ বছরের পর বছর হাসপাতালের ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন। সেই সরঞ্জামের দাম বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ নেওয়া হত। সরবরাহকৃত সামগ্রীর মোট বিলের ১০ শতাংশ সরাসরি সন্দীপ ঘোষের ব্যক্তিগত পকেটে যেত।

তদন্তকারীরা জানান, এক সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় দরপত্র ডাকার সময় সুমন ও বিপ্লব নিজেদের নামে টেন্ডারে অংশ নিতেন। পাশাপাশি, আরও কয়েকটি ভুয়ো সংস্থার নাম দিয়ে নথি তৈরি করা হত। বাস্তবে ওই সংস্থাগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কাগজে-কলমে দেখানো দাম বেশি থাকলেও সুমন ও বিপ্লবের সংস্থার সরবরাহকৃত সামগ্রীর দাম তুলনায় কম দেখানো হত। তবে প্রকৃত দামের থেকে তা ছিল দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

হাসপাতালের ওষুধ ও সরঞ্জাম কেনার জন্য একটি কমিটি থাকলেও, সন্দীপ ঘোষের প্রভাবের কারণে ওই কমিটির সদস্যরা কার্যত অসহায় ছিলেন। নির্দেশ অনুযায়ী কাগজপত্রে সই করতেই বাধ্য হতেন তাঁরা। কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য, যাঁদের মধ্যে প্রাক্তন সুপারও রয়েছেন, সিবিআই তদন্তে সন্দীপের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

প্রথম দিকে কমিটির সদস্যরা মুখ খুলতে না চাইলেও, বিপ্লব ও সুমনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি দেখানোর পর তাঁরা ধীরে ধীরে তথ্য প্রকাশ করেন। তাঁদের সাক্ষ্য ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা হয়েছে। এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সন্দীপকে জেরা করা হলে প্রথমে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও, পরে নানা দুর্নীতির বিষয় স্বীকার করে নেন বলে সিবিআই জানিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, সুমন হাজরা ও বিপ্লব সিংহ এই দুর্নীতিতে সরাসরি লাভবান হয়েছেন এবং অভিযুক্ত। তবে সন্দীপের সহকর্মী আধিকারিকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হননি। বরং সন্দীপের প্রভাব এবং চাপে তাঁরা দুর্নীতিতে অংশ নিতে বাধ্য হন। এই কারণেই তাঁরা সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে উঠেছেন।