আজ এখন নিউজ ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার,৪ জানুয়ারি: অনেকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ছবি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল- টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, কুট্টুস কলকাতায়। সেখানে ক্যাপ্টেন ও টিনটিনের পরনে বাঙালি বাবুর কেতায় ধুতি-পাঞ্জাবি। তবে টিনটিনের এহেন পোশাক দেখে বলাই যায় এটা টিনটিনের বাঙালি ফ্যানেদের কীর্তি। আমাদের দুনিয়ায় টিনটিন বার দুয়েক ভারতে এলেও কলকাতায় আসেনি।কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে না।বেলজিয়ান লেখক-চিত্রীর আঁকা সাংবাদিকটিকে কলকাতার মানুষের সহজে আপন করে নিয়ে। যেমন বাংলায় ও মফস্সল শহরে জড়িয়ে পড়েছে ডেনকালির জঙ্গল, মাউইটানের পথঘাট, খুলিগুহা বা ফিসফিসে কুঞ্জবন। ফ্যান্টমের বাংলা নাম যে ‘অরণ্যদেব’ হতে পারে তা সুদূরতম স্বপ্নে তার স্রষ্টা লি ফক না ভাবলেও, বাঙালি ভাবতে পেরেছিল অনায়াসেই। কলকাতার দেওয়ালে দৃশ্যদূষণ মুছতে আঁকা হুঁকোমুখো হ্যাংলা বা কুমড়োপটাশের পাশে বাঁটুল দি গ্রেট বা হাঁদা-ভোঁদার সঙ্গে অনায়াসে মুখ দেখাতে পারে টিনটিন বা হ্যাডক। স্নোয়ি দিব্বি কুট্টুস’ হয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে ঢুকে পড়ে বাঙলির বেডরুমে। কলকাতার মানুষের কমিকস-প্রেমের এর থেকে বড় উদাহরণ আর কী-ই বা হতে পারে! সেই কলকাতার বুকে যখন আয়োজিত হয় শুধুমাত্র কমিকসের জন্য একটা কার্নিভাল, তখন বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে অনেকেই বলে উঠতে পারেন— “সে কী! অ্যাদ্দিন হয়নি কেন?”
কসপ্লে হলো বিদেশে কমিক কন-এর অন্যতম দিক। বিভিন্ন ধরনের পারফরম্যান্স কমিকসের চরিত্র সেজে দেখানো হয়।কলকাতার এই কার্নিভালে দেখা মেলে সব রকমের ব্যাটম্যান, স্পাইডারম্যানের ও সবুজ বর্ণের হাল্কের। শুধু নায়কেরা কেন, খলনায়কেরাই বা কি কম জনপ্রিয় এই ব্রহ্মাণ্ডে! জোকার তো আজ আন্তর্জাতিক বিগ্রহ! বাংলা ভাষায় ক্যাপশন লেখা টিশার্টেও জোকারের বেদনাময় অথচ অম্লান হাসি জ্বলজ্বল করছে। কসপ্লের জন্য কার্নিভাল চত্বরের একপাশে মঞ্চ রয়েছে। তাতে বন বন করে কেউ মাশাটে ঘোরাতেই পারেন অথবা ব্যাটম্যানের কালো উত্তরীয় সরিয়ে উঁকি দিতেই পারেন টু ফেস বা পেঙ্গুইন সেজে।
কার্নিভাল ফেরত খুদের হাতে চমকাচ্ছে ডেডপুলের অস্ত্র, মুখে আয়রনম্যানের মুখোশ। তার পাশটিতে হাঁটতে হাঁটতে চল্লিশোর্ধ্ব বাবা কিনে ফেলেছেন কবেকার হারিয়ে যাওয়া ইন্দ্রজাল কমিকস ‘বেতালের বিয়ে’। ডেনকালির অরণ্যে খুলিগুহায় আয়োজিত সেই বিয়ের আসরে আইভরিলানার প্রেসিডেন্ট লুয়াগা আর জাদুকর ম্যানড্রেকের সঙ্গে নিমন্ত্রিত ছিলেন তিনিও। ভোজ অসম্পুর্ণ থেকে গিয়েছিল বইখানি হারিয়ে যাওয়ায়। আজ আবার নেমন্তন্ন। এই সব পরিতৃপ্তির ফাঁক দিয়ে আকাশে কি ভেসে উঠল বাদুড়ছায়া? একটা বাঁক ঘুরলে নির্জন ফুটপাথে টকটকে লাল রঙের হাসি ছড়িয়ে কেউ বলে উঠতেই পারে— “হোয়াই সো সিরিয়াস?” তার আপাত হাসিমুখের পিছনে খেলে যাচ্ছে ক্রুরতা আর বিষাদের বর্ণমালা… কলকাতা সত্যিই গথাম সিটি এই তিন দিন।