প্রয়াত বাংলার টেবিল টেনিসের পথপ্রদর্শক ভারতী ঘোষ, শোকস্তব্ধ ক্রীড়াজগৎ

আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 24 ফেব্রুয়ারি: বাংলার টেবিল টেনিসের মুকুটে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ এবং কোচ ভারতী ঘোষ। দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে টেবিল টেনিসের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন তিনি। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্রীড়াজগতের এই অমূল্য সম্পদ।

ভারতী ঘোষের শুরুটা হয়েছিল শিলিগুড়ির সেহগল ইনস্টিটিউটে। তেমন কোনো কোচিং বা প্রশিক্ষকের অভাবেও নিজের প্রচেষ্টায় খেলায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। সিনিয়রদের খেলা দেখে শিখে, পরে কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি হয়ে টেবিল টেনিসে পা রাখেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়। নিজের খেলার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ছোটদের খেলা শেখানোর প্রতি ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ। শুধু শিলিগুড়ি নয়, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংয়ের শিশুরাও পেয়েছে তাঁর প্রশিক্ষণ। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের জন্য তিনি বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতেন। নিজের খেলোয়াড়ি জীবন ও প্রশিক্ষণের মাঝে কোনো বাঁধা না আসার জন্য তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেননি।

পাঁচ দশক ধরে তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে প্রায় তিন হাজার টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নাম করা অনেক খেলোয়াড়ের জীবনের ভিত্তি ভারতী ঘোষের প্রশিক্ষণেই তৈরি। অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত মান্তু ঘোষ এবং অলিম্পিয়ান সৌম্যজিৎ ঘোষের মতো খেলোয়াড়রা তাঁর প্রশিক্ষণের ফসল। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য রাজ্য সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে ‘বঙ্গরত্ন’ এবং ২০২১ সালে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মানে ভূষিত করে। প্রশিক্ষকের ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন রাজ্যের টেবিল টেনিসের অন্যতম সেরা কোচ।

অসুস্থতার খবর পেয়ে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন। ভারতী ঘোষকে মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মান্তু ঘোষ ও গৌতম দেব।
ভারতী ঘোষের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ক্রীড়াজগতে। শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার ছোট্ট ঘরে বসবাস করা এই ক্রীড়াগুরু টেবিল টেনিসের এক অধ্যায় হয়ে রয়ে গেলেন। তাঁর জীবনসংগ্রাম এবং ক্রীড়ার প্রতি ভালোবাসা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে আগামী প্রজন্মের কাছে।