আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 11 মার্চ: উত্তরবঙ্গের কার্শিয়াং বনবিভাগের বাগডোগরা রেঞ্জে ব্যাঙডুবি এলাকায় টানা ২২ দিন অসুস্থ থাকার পর সোমবার মৃত্যু হলো একটি মাদি হাতিশাবকের। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বিরল ‘ট্রাইপ্যানোসোমা’ সংক্রমণের কারণে, যা সাধারণত ভারতের বন্যপ্রাণীদের মধ্যে খুব কম দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাতিটির মৃত্যুতে ‘সুরা’ রোগের ভূমিকা থাকতে পারে। এই রোগের জন্য দায়ী ‘ট্রাইপ্যানোসোমা ইভান্স’ নামক এক প্রকার পরজীবী প্রোটোজোয়া। সংক্রমণ হলে আক্রান্ত প্রাণী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। থাইল্যান্ড থেকে আসা বিশেষজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসকদের দল প্রাথমিক পরীক্ষায় অনুমান করেছেন, হাতিটি সম্ভবত এই রোগে আক্রান্ত ছিল।
বিশ্বজুড়ে ‘ট্রাইপ্যানোসোমা’ সংক্রমণ সাধারণত ‘সেৎসি মাছি’র মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ভারতে বাদুড়ের মাধ্যমেও এই সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ পশু চিকিৎসক গ্রিফিথ ইভান্স প্রথম এই রোগের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। যদিও ভারতের বন্যপ্রাণীদের মধ্যে বিশেষ করে হাতিদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রকোপ বিরল।
উত্তরবঙ্গের বনকর্তারা জানিয়েছেন, মৃত হাতিশাবকের উপসর্গ এই সংক্রমণের দিকেই ইঙ্গিত করছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেহরসের নমুনা পাঠানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে ইন্ডিয়ান ভেটেরনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার বনপাল ভাস্কর জেভি এই প্রসঙ্গে জানান, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে এই সংক্রমণ কীভাবে ছড়াল তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং আফ্রিকার মাছির মতো কোনও বাহকের উপস্থিতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‘ট্রাইপ্যানোসোমা’ সংক্রমণের জন্য কার্যকর ওষুধ ‘ট্রাইপ্যানোসাইড’ শুধুমাত্র থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। ফলে সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা নিয়ে বন্যপ্রাণ বিভাগের চিন্তা বাড়ছে। বনবিভাগ এখন জঙ্গলে নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে। এই ঘটনা উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বিরল রোগের উপস্থিতি নিয়ে নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছে। বনকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বিষয়টি রহস্যময়ই থেকে যাচ্ছে।