আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 31 ডিসেম্বর: কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া, পেশায় একজন নার্স। বর্তমানে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি। ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ অনুমোদন করেছেন। এই ঘটনায় ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
নিমিশা প্রিয়া কর্মসূত্রে স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে ইয়েমেনে বসবাস করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী ও মেয়ে ভারতে ফিরে আসার পর প্রিয়া ইয়েমেনেই থেকে যান। ২০১৫ সালে তলাত আবদো মেহদি নামে এক স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মেহদি প্রিয়াকে ক্লিনিক খোলার প্রস্তাব দেন, কারণ ইয়েমেনে বিদেশিদের একা ব্যবসা করার অনুমতি ছিল না। মেহদির সহযোগিতায় একটি ক্লিনিক খোলেন প্রিয়া।
কিন্তু মেহদি প্রিয়ার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে দেশছাড়া হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন। এমনকি তিনি প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন, যা প্রিয়ার জন্য আরও অসুবিধার সৃষ্টি করে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এই মিথ্যে পরিচয়ের ফলে পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি প্রিয়া। প্রিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, মেহদি তাঁকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন। ২০১৬ সালে প্রিয়া পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন এবং মেহদি গ্রেফতার হন। যদিও পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার পর, ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই প্রিয়া মেহদিকে ঘুম পাড়ানোর উদ্দেশ্যে একটি ইনজেকশন দেন। তবে ইনজেকশনের অতিরিক্ত ডোজের ফলে মেহদির মৃত্যু হয়। প্রিয়া এবং তাঁর এক বান্ধবী মিলে মেহদির দেহ টুকরো টুকরো করে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখেন।
পরে এই ঘটনার তদন্তে প্রিয়া ধরা পড়েন। ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাঁকে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। ২০১৮ সাল থেকে নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। কিন্তু সেখানেও তাঁর আবেদন খারিজ হয়। রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেন। শোনা যাচ্ছে, আগামী এক মাসের মধ্যেই এই আদেশ কার্যকর হতে পারে।
নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্তে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার এই বিষয়ে সমস্ত বিকল্প খতিয়ে দেখছে এবং প্রিয়ার পরিবারকে সাহায্য করছে। প্রাসঙ্গিক আইনি এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে ভারত। এই ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।