আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 20 জানুয়ারি: তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিলেন শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। সঙ্গে জারি হল ৫০ হাজার টাকার জরিমানা। সোমবার (২০ জানুয়ারি) এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো। সব মিলিয়ে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য নির্যাতিতার পরিবারকে, আদালত এই নির্দেশও দিয়েছে। যদিও এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা জানান, তিনি ক্ষতিপূরণ চান না। সেই সময়ে বিচারক বলেন, ‘এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে করা যায় তা আমি মনে করি না। তবে কর্তব্যরত মহিলাদের রক্ষা করা রাজ্যের দায়িত্ব। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই নিয়ম।’
রায় ঘোষণার আগে বিচারক সঞ্জয়কে তার বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি ধর্ষণ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। যদি আমি অপরাধ করতাম, তবে আমার গলায় থাকা রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হয়ে যেত।” তবে বিচারক তার বক্তব্যকে প্রমাণের অভাবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। বিচারক বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে যে প্রমাণ এসেছে, তা স্পষ্ট। আমি প্রমাণের ভিত্তিতেই বিচার করতে বাধ্য।”
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন জানানো হয়। তাদের মতে, এই অপরাধ ‘বিরল থেকে বিরলতম’ এবং সমাজের কাছে এটি দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত। তবে সঞ্জয়ের আইনজীবী মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিকল্প সাজার পক্ষে যুক্তি দেন। এই প্রসঙ্গে বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়, তখন কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার পদে কর্মরত, ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়। মামলার তদন্ত শুরুতে কলকাতা পুলিশ করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তা সিবিআইয়ের হাতে যায়।
এই ঘটনা রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের সুরক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উপর জোর দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছিলেন। আইন অনুযায়ী, সঞ্জয় চাইলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। তবে তার পরিবার, বিশেষত মা ও বোন, তাকে আইনি সাহায্য করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন।