আজ এখন নিউজ ডেস্ক, দেবপ্রিয়া কর্মকার,১৫ ফেব্রুয়ারি: প্রতুল মুখোপাধ্যায় আজ সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২। তিনি বেশ কয়েকদিন ধরে অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই প্রবীণশিল্পী ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তার শারীরিক অবস্থা আগের থেকেও অবনতি হওয়ায় তাকে আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এবং শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকদিন আগে তাকে দেখতে গেছিলেন। বাংলায় যতদিন কৃষ্টি থাকবে ততদিন থেকে যাবে তার গাওয়া মধুর গান।’আমি বাংলায় গান গাই’-এর মতো সব গান। শিল্পীর প্রয়াণ হলেও থেকে যাবে তাঁর অসামান্য সৃষ্টির মৌতাত।
প্রতুলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। তার বাবা বপ্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। আর মা বাণী মুখোপাধ্যায় ও দেশভাগের পর প্রতুলকে এপার বাংলায় চলে আসেন তিনি। তারা পরিবার সহ চুঁচুড়ায় থাকতে শুরু করেন। তিনি ছোট্ট বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিতেন। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু। নিজেও গান লিখতেন। অথচ প্রথাগত কোনও সঙ্গীতশিক্ষা তিনি নেননি। প্রতুলকে নিজের হৃদয়ের সুর ও কথার মিলবন্ধনে বেঁধে ফেলতে শিখেছিলেন। যেভাবে আদিম মানব সহজাত ভঙ্গিতে গুহার নিঃসীম অন্ধকারে সুরের সাম্পানে পাড়ি দিত অচিন দেশে, ঠিক সেই ভাবেই প্রতুল সারা জীবন গানের প্রদীপকে নিজের হৃদয় জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি তিনি হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায় অবস্থায় চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গেয়ে শোনাতেন। প্রথম সারা জীবন ধরে অসংখ্য মণিমুক্ত সৃষ্টি করেছেন। তিনি, হিন্দি, বাংলা আধুনিক গান থেকে শুরু করে জাপানি গান ও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান।
জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮)। তবে সেটি একক অ্যালবাম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’ প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। সেখানে সংকলিত হয়েছিল শিল্পীর অপ্রকাশিত গানগুলি। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ ছাড়াও ‘আলু বেচো’, ‘ছোকরা চাঁদ’, ‘তোমার কি কোনও তুলনা হয়’, ‘সেই মেয়েটি’, ‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ’-এর মতো গানও শ্রোতার মন জিতেছে বারবার। তবু কিছু সৃষ্টি তার স্রষ্টার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে মিশে যায়। প্রতুলের জীবনের ‘ম্যাগনাম ওপাস’ এই গান। বাংলা ও বাঙালির আত্মা যেন ওই গানে জলছাপের মতোই থেকে গিয়েছে। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনওই পছন্দ করেননি। কিন্তু অন্যান্য গানের মতোই ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গাওয়ার সময় তাঁর কণ্ঠনিঃসৃত জাদুতে গানের কথার সুরেলা চলন মগ্ন করে রাখত শ্রোতাকে। যতদিন বাঙালি শ্রোতা থাকবে এই পৃথিবীতে বেজে চলবে গানটি। থেকে যাবে সেই গানের অমোঘ অনুরণন।