আজ এখন নিউজ ডেস্ক, 4 ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশে পুলিশের গুলিচালনার ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন। জনবিক্ষোভ দমনে নির্বিচারে গুলি চালানো বন্ধ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষী নীতি এবং ১৯৪৩ সালের পুলিশ আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করতে চায় এই কমিশন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে পুলিশের দায়িত্ব পালনের ধরন ও বলপ্রয়োগের মাত্রায় আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানোর আগে পাঁচ ধাপের একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। প্রথমে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে গুলি ব্যতীত বিকল্প কৌশল, যেমন জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, পেপার স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। একান্ত প্রয়োজনে শটগান বা ইলেকট্রিক পিস্তলের মতো কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। শুধুমাত্র জনতা মারমুখী হলে বা সরকারি সম্পত্তি সুরক্ষায় বাধ্য হয়ে গুলি চালানো যাবে, তাও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে।
গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনায় বহু নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র নেতা আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধের মর্মান্তিক মৃত্যু বিক্ষোভকারীদের আরও ঐক্যবদ্ধ করেছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর সেই ঘটনার পটভূমিতেই পুলিশের গুলিচালনার নীতিতে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের লক্ষ্যে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের সুপারিশও করেছে সংস্কার কমিশন। তবে কমিশনের কাঠামো এবং কার্যপ্রণালী নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের দায়িত্বে এই নতুন নীতিমালা কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই উদ্যোগ জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সাধারণ নাগরিকরা।